লাখাই প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ১ নম্বর লাখাই, বুল্লা ও করাব ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে সুতাং নদী। এক সময়ের খরস্রোতা এই নদীটি বর্তমানে দূষণে মৃতপ্রায়।
স্থানীয় শিল্পনগরীর বিষাক্ত বর্জ্যে বিপন্ন সুতাংয়ের পরিবেশ। এসব বর্জ্যে গোটা নদী যেন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে নদীর মাছ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, দুর্গন্ধযুক্ত নদীর এই বিষাক্ত পানি সেচের কাজে ব্যবহারের কারণে জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কমে গেছে উৎপাদন। সুতাংয়ের পানি ব্যবহার করে এবার বোরো ফসল চাষাবাদ করায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, নদীর পানি পচে গেছে। এই পানি ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া নদীর পানি ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয়রা।
সরেজমিন বুল্লা ও করাব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলার শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সুতাং নদীতে। যে কারণে নদীর পানি কালো রং ধারণ করেছে। এতে নদীতীরবর্তী বুল্লা, করাব ও ১ নম্বর লাখাইসহ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কৃষি, স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানি ব্যবহার করায় কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে রোগবালাই। যে কারণে ফসল উৎপাদনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়। জমিতে এসব পোকামাকড় মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জমিতে জমে থাকা এই নোংরা পানি পচে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে তীব্র মাত্রায়। জমিতে কাজ করতে গিয়ে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
১ নম্বর লাখাই ইউনিয়নের স্বজনগ্রামের কৃষক আরজু মিয়া জানান, জমিতে নদীর পানি সেচ দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বুল্লা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের কৃষক কামাল উদ্দিন জানান, শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে এমন কালো হয়ে গেছে। প্রায়ই নদীতে মরা মাছ ভেসে থাকে। দৈনন্দিন কাজ ও কৃষিতে সুতাং নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা।
করাব ইউনিয়নের সুধাংশু দাস জানান, জমিতে বোরো চাষাবাদ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জমির অধিকাংশ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। সুতাংয়ের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি। রুহিতনশী গ্রামের কৃষক সুশীল চন্দ্র দাশ জানান, ধানের ক্ষেতে জন্ম নিচ্ছে নানা ধরনের পোকামাকড়। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ। জমিতে কাজ করতে গিয়ে হাত-পায়ে নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে কৃষকদের।
লাখাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মিজান জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সুতাং নদীর পানি ব্যবহার করায় জমির মাটি কালো রং ধারণ করছে। উৎপাদনে তেমন সমস্যা দেখা না গেলেও কৃষকরা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে নদীর পানি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। কৃষকদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জমিতে কাজ করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করা ও নদীর পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা সুতাং নদী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর লাখাই উপজেলার কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
Leave a Reply